নিউসান এনজিও লোন পদ্ধতিঃ
নিউসান এনজিও বাংলাদেশের দক্ষিণা-পশ্চিমাঞ্চলের একটি সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা যারা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কৃষক, মহিলা এবং অন্যান্য শ্রেণিপেশার লোকজনদের ক্ষুদ্রঋণ সেবা প্রদান করে থাকে। নিউসান-এর ঋণ মূলত গ্রামীণ এলাকায় আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, কৃষক ও চাষাবাদ প্রত্যাশীদের সহায়তা করার জন্য প্রদান করা হয়।
কিন্তু কিভাবে আপনি লোন পেতে পারেন, কারা লোন পাবেন, কত পাবেন, কত দিনে পরিশোধ করতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা না থাকলে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়লে আপনি নিউসান এনজিও লোন পদ্ধতি নিয়ে যেসকল ধারণা পাবেনঃ
নিউসান এনজিও থেকে লোন পেতে কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে?
লোনের কথা আসলেই যে কাউকে কোন ব্যাংক বা এনজিও লোন প্রদান করেনা। এক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতাকে কিছু শর্ত পালন করতে হয়। একই সাথে কিছু যোগ্যতা থাকতে হয়। নিউসান-এর লোনও এর ব্যতিক্রম নয়। নিউসান থেকে লোন পেতে হলে যে যে শর্ত পূরণ করতে হবে ও যোগ্যতা থাকতে হবেঃ
- বিবাহিত হতে হবে।
- নিউসানের যেকোন ব্র্যাঞ্চে সঞ্চয় হিসাব থাকতে হবে।
- বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছর হতে হবে।
- ৪৬ কিস্তির মধ্যে সম্পূর্ণ ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হবে।
- ঋণের একজন গ্যারান্টার লাগবে।
- ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা থাকতে হবে।
- অতীতে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কোন খারাপ রেকর্ড থাকা যাবেনা।
- ন্যূনতম নিজের একটি বাড়ি থাকতে হবে।
- যেখান থেকে লোন নিবেন সেই অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- সময়মত কেন্দ্র সভায় উপস্থিত হয়ে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হবে।
সাধারণত এই শর্তগুলো পূরণ করলেই নিউসান এনজিও থেকে লোন নেওয়া যায়। তবে কোন কোন শর্ত কারো কারো ক্ষেত্রে বিশেষভাবে শীতিল হতে পারে।
কত টাকা লোন দিয়ে থাকে?
সাধারণত নিউসান লোন প্রদানের ক্ষেত্রে ৫,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন দিয়ে থাকে। তবে অনেকেই বেশি টাকা লোন নিতে চান। কিন্তু নিউসান একান্নভূক্ত পরিবারে দুইজনকে লোন প্রদান করে না।
নিউসান লোনের প্রকারভেদঃ
নিউসান মূলত ৩ ধরণের লোন প্রদান করে থাকে। সেগুলো হলোঃ
- প্রাইমারি লোনঃ লোনের পরিমাণ ৫,০০০ টাকা থেকে ২০,০০০ টাকা। পরিশোধের সময়কাল ১২ মাস।
- স্পেশাল লোনঃ লোনের পরিমাণ ২১,০০০ টাকা থেকে ৪০,০০০ টাকা। পরিশোধের সময়কাল ১২ মাস।
- ক্ষুদ্র উদ্রোগ লোনঃ লোনের পরিমাণ ৪১,০০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা। পরিশোধের সময়কাল ১২ মাস।
সুদের হারঃ
নিউসান এনজিও এর প্রাইমারি, স্পেশাল এবং ক্ষুদ্র উদ্রোগ লোনের ক্ষেত্রে সুদের হার ২৪%। সুদের পাশাপাশি প্রতি লোনের বিপরীতে সার্ভিস চার্জসহ আরো কিছু চার্জ যুক্ত হবে। আপনি লোন নেওয়ার আগে অফিস থেকে এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিবেন। এছাড়া আপনার জমাকৃত সঞ্চয়ের উপর নিউসান এনজিও ৬% হারে সুদ প্রদান করে।
কেন নিউসান এনজিও থেকে লোন নিবেন? সুবিধা কি?
আর্টিকেলের শুরুতেই আমরা বলেছি যে, নিউসান মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ী, কৃষক, উদ্যোক্তা ও চাষাবাদ প্রত্যাশীদের জন্য লোন প্রদান করে। আর সাধারণ ব্যাংকগুলো থেকে লোন পাওয়া খুবই কঠিন। আর যারাও বা লোন পায় তারা বিভিন্ন ডকুমেন্টস, জমির দলিল, ব্ল্যাংক চেকসহ বিভিন্ন কিছু জামানত রাখতে হয়। তাই সাধারণ ব্যাংক লোনের থেকে নিউসান এনজিও লোন পাওয়া খুবই সহজ ও কম ঝামেলার। তাছাড়া সেরকম কোন ডকুমেন্টসও জমা দেওয়া লাগেনা। আর খুব কম সময়েই লোন হাতে পাওয়া যায়। কিস্তি শুরুর আগে ১৫ দিন গ্রেস প্রিরিয়ড পাওয়া যায়। সর্বপরি, নিউসানের পুন:নির্দেশ না দেওয়া অবধি সাপ্তাহিক সঞ্চয় ছাড়া ঋণের বিপরীতে বাড়তি কোন প্রকার থোক সঞ্চয় জমা করা লাগে না। এছাড়া গ্রাহকের স্বামী-স্ত্রী, যে কারো আকস্মিক মৃত্যুতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল সাপেক্ষে ঋণ মওকুপের সুবিধা পাওয়া যায়।
অসুবিধাঃ
নিউসান এনজিও লোনের সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে। তার মধ্যে কিছু অসুবিধা হলোঃ
- লোনের কিস্তি কোন ভাবেই বকেয়া রাখা যায়না।
- কিস্তির টাকা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে হয়।
- পরিশোধের সময়সীমা কম।
- বিভিন্ন শর্ত।
উপসংহারঃ
সকল প্রকার ঋণ একটি চুক্তিবদ্ধ সহায়তা। NEWSUN NGO-এর ঋণ ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় মূহুর্তে আপনাকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। কিন্তু ঋণ নেওয়ার আগে ঋণের শর্তাবলীর বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় রাখবেন। ভবিষ্যতে আর্থিক চাপ ও আইনী জটিলতা এড়াতে যে কোনো ঋণ নেওয়ার পূর্বে সুবিধা ও ঝুঁকির দিকগুলো অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। ঋণের টাকা প্রদর্শিত আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ডে ব্যবহার করতে হবে।